High Blood Pressure Home Treatment
বর্তমান সময়ে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার অতি কমন একটি সমস্যা । ধারণা করা হয় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা 100 কোটি। প্রতিনিয়ত এই সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উচ্চ রক্তচাপ একটি জটিল সমস্যা। এটি পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়, তবে কিছু কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করলে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না ফলে পরিণতি হয় ভয়াবহ। এজন্য একে "নীরব ঘাতক" বলা হয়।
হাই ব্লাড প্রেসার কি/উচ্চ রক্তচাপ কি:-
হৃদপিন্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের অতিরিক্ত চাপ কে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বলে সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের আদর্শ রক্তচাপ থাকে 120/80 মিলিমিটার মার্কারি । এই রক্তচাপ মান যখন 140/90 মিলিমিটার মার্কারি বা তার বেশি হয় তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণসমূহ:-
কিছু কিছু লক্ষণ দেখে উচ্চরক্তচাপ শনাক্ত/ চিহ্নিত করা যায় ।
1. অসস্থি বা গরম লাগা অনুভূত হওয়া
2. তীব্র মাথা ব্যথা
3. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
4. মাথা ঘোরা
5. অল্পতেই রেগে যাওয়া
6. মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া 7. রাতে ভাল ঘুম না হওয়া
8. হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
এসকল লক্ষণ প্রকাশ পেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
হাই ব্লাড প্রেসার/ উচ্চ রক্তচাপের কারণ সমূহ:-
উচ্চ রক্তচাপের বহুবিধ কারণ রয়েছে। তার উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ তুলে ধরা হলো:-
1. বংশগত কারণ:- মা-বাবা কারো যদি উচ্চ রক্তচাপ সমস্যার রেকর্ড থাকে তবে সন্তানের উচ্চ রক্তচাপ সমস্যার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া নিকট আত্মীয় কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও এর সম্ভাবনা থাকে।
2. অতিরিক্ত ওজন:- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যার অন্যতম একটি কারণ। উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপর পর্যালোচনা করে জানা গেছে যাদের অতিরিক্ত ওজন আছে এবং স্থূলতার ব্যাক্তিদের সংখ্যাই বেশি।
3. অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস:- অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ অর্থাৎ তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া, অতি মসলাযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কেননা এসকল খাবার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ফলে রক্ত পরিবহন নালিগুলো মোটা ও পুরু হয়ে যায়। যা উচ্চ রক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
4. বিভিন্ন রোগ ও ঔষধ সেবন:- সাধারণত রক্তচাপ উচ্চ রক্তচাপ বয়স্কদের হয়ে থাকলেও কিছু কিছু কারণে এটি কৈশোর বা প্রাপ্ত বয়সের যে কারো হতে পারে। বিভিন্ন ঔষধ সেবন যেমন স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন সেবন, দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন এর প্রভাব, ব্যথা নিরাময় কিছু ঔষধ সেবনে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন রোগ যেমন:- কিডনির রোগ, গর্ভাবস্থায় এ্যাকলাম্পশসিয়া ও প্রি-এ্যাকলাম্পসিয়া হলে, অ্যাড্রেনাল ও পিটুইটারি টিউমার ইত্যাদি উচ্চ রক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
5. ধূমপান/মাদক সেবন:- ধূমপান ও মাদক সেবনকারীরা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় বেশি ভুগে থাকে।
6. মানসিক চাপ:- পারিবারিক কলহ, দুশ্চিন্তা, অশান্তি, অতিরিক্ত মানসিক চাপ উচ্চ রক্তচাপ এর কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের প্রতিকার/উচ্চ রক্তচাপ করণীয়/ হাই ব্লাড প্রেসার প্রতিরোধে:-
উচ্চরক্তচাপ পুরোপুরি নির্মূল করা না গেলেও কিছু নিয়ম মেনে চললে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। যেমন:- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ করা, ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করা, প্রতিদিন সকাল বিকাল হাঁটা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, লিফট এর পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, দৈনিক 2300 মিলিগ্রাম বা 1 চা চামচের কম লবন খাওয়া, মাদক/ধূমপান পরিহার করা, প্রয়োজনে সঠিক ঔষধ সেবন ও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা, মাসে অন্তত একবার হলেও ব্লাড প্রেসার চেক করা ।
প্রাকৃতিক ভাবে কিছু খাবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে যেমন:- তেতুল, লেবু, কমলা, জাম্বুরা, বিট, তরমুজ ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
উল্লেখ্য যে, উচ্চ রক্ত চাপের প্রভাব আমাদের শরীরের চারটি প্রধান অঙ্গের মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই চারটি অঙ্গ মস্তিষ্ক, চোখ, হৃদপিণ্ড ও কিডনি। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিন্ডের মাংসপেশিকে দুর্বল করে দেয়। ফলে হৃদপিণ্ড স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ হয়। এই অবস্থাকে হার্ট ফেইলিওর বলে। রক্তনালীর গাত্র সংকুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা ইনফ্রাকশনের সৃষ্টি করে এছাড়া মস্তিষ্কের স্ট্রোক, কিডনি নষ্ট, রেটিনায় রক্তক্ষরণের কারণে অন্ধত্ব ছাড়াও প্যারালাইজড এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। "High Blood Pressure Treatment"